| |
               

মূল পাতা রাজনীতি ইসলামী দল জাতীয় সরকার গঠনে ইসলামী আন্দোলনের ৯ দফা প্রস্তাব


জাতীয় সরকার গঠনে ইসলামী আন্দোলনের ৯ দফা প্রস্তাব


রহমত নিউজ ডেস্ক     24 June, 2023     11:11 PM    


ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেছেন, বিদ্যামান সঙ্কট নিরসনে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিকল্প নেই। আর জাতীয় সরকার ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে রাজনৈতিক সংকট ঘনিভূত হচ্ছে। যা দেশের জনগণের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনতে পারে এবং দেশে আরও একবার সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। 

শনিবার (২৪ জুন) সকাল ১০টায় ঢাকার গুলিস্থানস্থ ইম্পেরিয়াল কনভেনশন সেন্টারে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং দেশের শীর্ষ ওলামা মাশায়েখ, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল অব. সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহীম বীর প্রতিক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, মসজিদ মিশনের মহাসচিব ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ড. আব্দুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম মসীহ, জাতীয় ইনসাফ কায়েম পার্টির সদস্য সচিব শওকত মাহমুদ, এবি পার্টির সদস্য সচিব মুজিবুর রহমান মঞ্জু, বাংলাদেশ জমিয়তুল মুছলেহীনের আমির মাওলানা খলিলুর রহমান নেছারাবাদী, ফরায়েযী জামাতের সভাপতি মাওলানা আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ হাসান, মুসলিম লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আতিকুল ইসলাম, এনডিএম সভাপতি ববি হাজ্জাজ, বাংলাদেশ ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, খেলাফতে রব্বানীর চেয়ারম্যান মুফতী ফয়জুল হক জালালাবাদী, মোকামিয়ার পীর মাওলানা মাহমুদুল হাসান ফেরদৌস প্রমুখ

চরমোনাই পীর বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি নিয়েও আপত্তি করেছেন তিনি। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে আয়োজনের পাঁয়তারা চলছে। মানুষকে ধোকা দিয়ে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বাধীনতার পর দলীয় সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও নিরপেক্ষ হয় নাই। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের ওপর দমনপীড়ন চালিয়ে এক তরফা নির্বাচন করে ক্ষমতা দখল করাই দলীয় সরকারের মূল উদ্দেশ্য থাকে। ভবিষ্যতেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার আশা করা যায় না। ১৯৭৩, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচন তার প্রমাণ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরোধিতা করে চরমোনাই পীর বলেন, ‘রাজনৈতিক একটি বিশেষ প্রেক্ষাপটে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে প্রথম নির্বাচন হয় ১৯৯১ সালে। ওই নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তৎকালীন বিরোধীদল বলেছিল নির্বাচনে সূক্ষ্ম কারচুপি হয়েছে। এ অজুহাতে বিরোধী দল অনেকদিন পার্লামেন্ট বর্জন করেছিল। আবার দ্বিতীয়বার ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে ওই সময়ের বিরোধী দল বলেছিল ভোটে স্থূল কারচুপি হয়েছে এবং তারাও লাগাতার সংসদ বর্জন করেছিল। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় নাই। সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেখতে পাই দলীয় সরকার, সামরিক সরকার, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সেনা সমর্থিত সরকারের অধীনে কোনও নির্বাচনই নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয় নাই। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং বিগত পদ্ধতিগুলোর ত্রুটির কারণে নিবন্ধিত সব দলের পরামর্শক্রমে ও অংশগ্রহণে জাতীয় সরকার গঠন করে তার অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তা অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে বলে ইসলামী আন্দোলন মনে করে।’

জাতীয় সরকারের রূপরেখা প্রসঙ্গে চরমোনাই পীর বলেন, ‘আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য ও  গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ ভেঙে দেওয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনও কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। বর্তমান মন্ত্রিসভার কেউ নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।’

জাতীয় সরকারের প্রস্তাবিত রূপরেখা 
১. আপিল বিভাগের একজন বিজ্ঞ, সৎ যোগ্য গ্রহণযোগ্য বিচারপতিকে প্রধান করে নিবন্ধিত  দলগুলোর প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন হবে। 
২. যারা জাতীয় সরকারে থাকবেন তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেবেন না।
৩. জাতীয় সংসদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই জাতীয় সরকার গঠন করতে হবে।
৪. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বর্তমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিতে হবে।
৫. সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পাশাপাশি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারের কাছে  ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। 
৬. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করবেন। কোনো কারণে তা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন দিয়ে নির্বাচিত  প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। 
৭. জাতীয় সরকার গঠিত হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ভেঙ্গে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন  করতে হবে। 
৮. বর্তমান মন্ত্রীসভার কেউ‘ই নির্বাচনকালীন জাতীয় সরকারে থাকতে পারবেন না।

৯. সকল দলের প্রতিনিধিদের নিয়ে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে নির্বাচনটি সকল দলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে বলে  আমাদের বিশ্বাস। অনেক দলই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা দলীয় সকারের অধীনে  নির্বাচনের কথা যেহেতু পূর্ব থেকে বলে আসছেন, তাই হয়তো এ পদ্ধতিগুলো তাঁরা পরিবর্তন  করতে চান না। আমরা বলি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তো সময়ের প্রেক্ষিতে এসেছে।  ১৯৯১ সালের আগে কোনো দিনই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নামে কোনো সরকার ছিল না এবং এ নামে নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। এ পদ্ধতিও শেষ পর্যন্ত অবিতর্কিত থাকেনি। আর দলীয়  সরকারের অধীনে নির্বাচন তো স্বাধীনতার পর কোনো কালেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। সামরিক  সরকারের অধীনে নির্বাচন ছিল ফরমায়েশী নির্বাচন। সামরিক সরকার জনমতের তোয়াক্কা’ই  করে নাই। তাই জাতীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আমরা রাজনীতিবিদ,  বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ ও আলেম-ওলামাগণের নিকট এ ব্যাপারে সুচিন্তিত মতামত প্রদানের  অনুরোধ জানাচ্ছি। ইতিপূর্বে আমরা অনেক বুদ্ধিজীবী, শিক্ষাবিদ, রাজ‣নতিক ব্যক্তিত্ব ও  ওলামায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে ইতিবাচক সাড়া পেয়েছি। সর্বোপরি জাতীয় এবং রাজ‣নতিক সংকট নিরসনে দলীয় সরকারের অধীনে নয়; বরং জাতীয়  সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংখ্যানুপাতিক পতিনিধিত্ব (চজ) পদ্ধতিতে সংসদে প্রতিনিধিত্ব এবং  সিইসি’র পদত্যাগের দাবিতে সকল দেশপ্রেমিক দল ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবী  জানাচ্ছি।